যার গানে মেখে আছে মাটির ঘ্রাণ আব্দুল আলীম - সংবাদ দিগন্ত ।। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত

যার গানে মেখে আছে মাটির ঘ্রাণ আব্দুল আলীম

বিনোদন ডেক্স

এই প্রজন্মের অনেক শ্রোতা হয়ত তার নাম জানে না। কিন্তু তার রেখে যাওয়া গান কানে বাজেনি, এমন শ্রোতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি আব্দুল আলীম। বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে যে’কজন শিল্পী বাংলা গানের চর্চা প্রসারিত করেছিলেন, তাদের অন্যতম। আজ মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) কিংবদন্তি এই শিল্পীর প্রয়াণ দিবস।
দেশ স্বাধীনের তিন বছর পরই মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান আব্দুল আলীম। তার মৃত্যুর প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল। এই লম্বা সময়ে তিনি হয়ত প্রজন্মের কাছে অনেকটা বিস্মৃত হয়ে গেছেন। তবে তার গান এখনও দোলা দেয় সবার মনে। নতুন প্রজন্মের কাছেও সেসব গানের গ্রহণযোগ্যতা বেশ। বাংলার চিরায়ত রূপ-বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি কিংবা মাটির সুরের জন্য তিনি যেন শ্রেষ্ঠতম আশ্রয়।

আব্দুল আলীমের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে। পারিবারিক অনটনে সেভাবে আনুষ্ঠানিক গান শেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু গলায় তার সুর ছিল। সেই শক্তিতেই গ্রামোফোন রেকর্ড শুনে শুনে গানের ভুবনে নিজেকে মেলে ধরেন। তার গলার প্রশংসা অল্প সময়েই চারদিকে ছড়িয়ে যায়। সেই সুবাদে পরবর্তীতে একাধিক সংগীতগুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে আব্দুল আলীম প্রথম গান রেকর্ড করেছিলেন। এর তিন বছর পর দেশভাগের সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এখানকার বেতারে শুরু হয় তার সংগীতের নতুন অধ্যায়। পরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু হলে সেখানেও গান করেন নিয়মিত। এছাড়া প্রায় অর্ধশত সিনেমায় প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ গান গেয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ‘সুতরাং’, ‘রূপবান’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘লালন ফকির’, ‘সুজন সখী’র মতো সিনেমায় গান গেয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন এই নন্দিত শিল্পী।
আব্দুল আলীমআব্দুল আলীমের গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে- ‘মেঘনার কূলে ঘর বান্ধিলাম’, ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, ‘কে যাও রে ভাটির দেশের নাইয়া’, ‘শোনো গো রূপসী কন্যা গো’, ‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না’, ‘দোল দোল দোলোনি’, ‘এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া’, ‘পরের জায়গা পরের জমি’, ‘থাকতে পার ঘাটাতে তুমি পারে নাইয়া’ ইত্যাদি। এছাড়া ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালুহু’, ‘নবী মোর পরশমণি’, ‘মনে বড় আশা ছিল যাবো মদিনায়’সহ বহু ইসলামিক গানও উপহার দিয়েছেন তিনি।

স্বাধীন দেশে বেশি দিন বাঁচার সুযোগ হয়নি আব্দুল আলীমের। তাই তার সমস্ত পুরস্কার মরণোত্তর দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাকে। এছাড়া ১৯৭৫ সালের ‘সুজন সখী’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ গায়কের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button