অনলাইনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাল্গুনী শপ.কম এর সিইও কে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ঃ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার - সংবাদ দিগন্ত ।। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত

অনলাইনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাল্গুনী শপ.কম এর সিইও কে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ঃ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

সাকিবুল ইসলাম সুজন, নিজস্ব প্রতিবেদক (ক্রাইম)সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্র করে সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র। অতি সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব।

এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব-৪। সম্প্রতি কতিপয় ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখ ০৪.৫০ ঘটিকা হতে ২৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখ ১২.২০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মহানগরীর খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন শপ “ফাল্গুনী শপ.কম” এর সিইও মোঃ পাভেল হোসেন (৩০) সহ মোট ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

অভিযান কালে “ফাল্গুনী শপ.কম” অফিস হতে প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী যেমনঃ ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগজিন, ০২ রাউন্ড গুলি, ২৪ ক্যান বিয়ার, ০৪ বোতল দেশি মদ, ০১ টি প্রাইভেট কার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, বিপুল পরিমান এন-৯৫ মাস্ক, ১০০ টি ইনভয়েস, ৩০ চেক বহি, ৮০ টি সীল ও বিপুল পরিমান বিজ্ঞাপনের স্ক্রীনশট উদ্ধার করা হয়। অভিযান কালে তার ওয়ার হাউজ হতে ৪২৩ কেজি চাঁ পাতা, ৭১৫ কেজি চাউল, ৪১২ কেজি মসুর ডাল, ২৬০ কেজি ফুলক্রিম মিল্ক, ০৮ টি বাই-সাইকেল, ৪৫০ লিটার সয়াবিন তৈল, ২১৪ লিটার সরিষার তৈল, ৫০ কেজি লবন, ১১০ কেজি হুইল পাউডার, গ্লাস ক্লিনার, হারপিক অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ পাভেল হোসেন (৩০), জেলা-গোপালগঞ্জ, মোঃ সাইদুল ইসলাম (৪০), জেলা-নেত্রকোনা, আব্দুল্লাহ আল হাসান (২৫), জেলা-টাঙ্গাইল, মোছাঃ ফারজানা আক্তার মিম (২১), জেলা-পটুয়াখালী।

প্রতারক পাভেলের উত্থানঃপ্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফাল্গুনী শপ.কম কারসাজির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ পাভেল হোসেন যিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান, এবং মোছাঃ ফারজানা আক্তার মিম তার অন্যতম সহযোগী। গ্রেফতারকৃত মোঃ পাভেল ১৯৯১ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। তারা ০৮ ভাই-বোন তার মধ্যে সে চতুর্থ। তার বাবা গোপালগঞ্জ জেলার একটি সরকারী অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছে। সে ২০০৭ সালে গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি স্কুল হতে এসএসসি, ২০০৯ সালে ঢাকার একটি কলেজ হতে এইচএসসি এবং ২০১৪ সালে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে বলে জানা যায়। ২০০৯ সালে এইচএসসি অধ্যয়নরত অবস্থায় সে একটি অস্ত্রসহ র‌্যাবের কাছে আটক হয় এবং তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর Learning and Earning Project এ রাজবাড়ীতে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করে। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সময় তার পরিচিত একজন তাকে অনলাইন ব্যবসা করার পরিকল্পনা দেয়। ২০১৯ সালের শুরুতে পাভেল, জনৈক দিদারুল আলম, কানিজ ফাতেমা ও রহমতুল্লাহ শওকত মিলে ফাল্গুনী শপ.কম নামে একটি অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম তৈরি করে। শুরুতে তারা উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়াকৃত স্পেসে আউটলেট খুলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাবসার শুরুতেই পাভেলের অন্য অংশীদারগণ তার এই গ্রাহক ঠকানোর বিষয়টি বুঝতে পারে এবং তারা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে এবং এফিডেবিট করে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে যৌথ ব্যবসা থেকে সড়ে যায়। তারা এ বিষয়টি জয়েন্ট স্টক অথোরিটিকেও অবহিত করে। তথাপি পাভেল তাদের নামে জাল সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করত এমনকি তাদের নাম ব্যবহার করে যৌথনামে চেক পর্যন্ত ইস্যু করত। ২০২১ সালের মে মাসে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকজন গ্রাহক পাভেলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করলে পাভেল সিআইডি কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ২১ দিন জেলে থেকে জামিনে আসে এবং সে পূর্বের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠে। কিছু সংখ্যক গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে অধিদপ্তর কর্তৃক একাধিকবার ফাল্গুনী শপ.কম এর আউটলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুলাই মাসে পাভেল খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় “অরিমপো.কম” ও “টেক ফেমিলি.কম” নামে নতুন অফিস স্থাপন করে এর আড়ালেই ফাল্গুনী শপ.কম এর কার্যক্রম পরিচালনা করে। উল্লেখ্য যে, “অরিমপো.কম” ও “টেক ফেমিলি.কম” এ সে নিজে এমডি এবং তার স্ত্রী রিতা আক্তার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

প্রতারক সংগঠনের কার্যপদ্ধতি টার্গেট/ভিকটিম/সদস্য সংগ্রহঃ ক্রেতা সংগ্রহঃ এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা করোনা মহামারিতে লকডাউন চলাকালীন সময়ে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী স্বল্প মূল্যে বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে। তাদের এই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতাসাধারণ তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং বিপুল পরিমান অর্ডার দিতে থাকে। পরবর্তীতে প্রতারক প্রতিষ্ঠানটি কিছু কিছু ক্রেতাকে আংশিক, কিছু কিছু ক্রেতাকে নিম্নমানের পণ্য আবার কিছু কিছু ক্রেতাদের কোন পণ্য সরবরাহ না করে সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করে। ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহঃযেসকল ক্রেতা তার এই অনলাইন শপ ফাল্গুনী.কম পণ্যের অর্ডার করতো তাদেরকে সে পণ্যের সমূদয় মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতে বলত। তখন সাধারণ লোকজন তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে চাহিত পন্যের সমূদয় মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতো। সে পরবর্তীতে মার্চেন্ট একাউন্ট ও অনলাইন গেটওয়ে থেকে টাকা অন্যত্র স্থানান্তর বা জমি/প্লট কিনে টাকা লেয়ারিং করত। প্রতারণার কৌশলঃ প্রতারণার কৌশল হিসেবে সে শুরু থেকেই তার অনলাইন শপ “falgunishop.bd”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button