চৈতি গার্মেন্টসের আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন শ্রমিককে ফোনে কারখানার বাইরে ডেকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দক্ষিণখান থানাধীন চৈতি গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মালিক পক্ষের শ্রমিক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অংশ নেয় বলে অভিযোগ আহত শ্রমিকদের।
ঘটনার পরথেকে গতকাল থেকে
লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয় শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, চৈতি গার্মেন্টসের কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান (৩২), ফিনিশিং আয়রনম্যান সবুজ মিয়া (২৮) ও বাচ্চু মিয়া (৩২)। আহতদের প্রথমে উদ্ধার করে দক্ষিণখানের একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পরে আবার উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়
আহত শ্রমিক কামরুল হাসান বলেন, ‘গতকাল (রোববার) শ্রমিকদের বেতন শতকরা ৮শতাংশ বৃদ্ধির দাবিতে আমাদের গার্মেন্টসের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করে। সেখানে গার্মেন্টসের মালিক পক্ষের শ্রমিকেরা নারী শ্রমিকদের গায়ে হাত দেয়, সেই সঙ্গে তাদেরকে গালমন্দ করে। পরে আমরা প্রতিবাদ করি।
তিনি আরও বলেন, ‘আজও ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মালিক পক্ষের শ্রমিক ১১ জন আজ কাজে যোগদান করে নাই। পরে মেহেদী হাসান নামে এক বহিরাগত আমাদের ফোন দিয়ে গার্মেন্টসের সামনের মার্কেটের কাছে ডেকে নেয়। সেখান থেকে হাজীপাড়ার ১০ / ১২ জন আমাদের তিনজনকে ভার্সেটাইল কারখানার সামনে থেকে নিয়ে হাজীপাড়া মসজিদের সামনে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া মাত্রই ১০ / ১২ জন লাঠিসোঁটা, রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।’
অপরদিকে চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুল বলেন, ‘১০ / ১২ জন শ্রমিক এমডি নিজে ঢুকাইছে। তারা ঠিকমতো কাজ করে না। এ ছাড়াও তারা আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে মারামারি করে। আজ তারা কাজে না এসে শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। এতে বহিরাগত লোকজনও ছিল।’
আহত শ্রমিকদের সঙ্গে হাসপাতালে আসা শ্রমিকেরা জানান, একজন শ্রমিককে মালিক পক্ষ কাজে নেয়। সে কাজ করে না। ফ্লোরের পরিবেশ নষ্ট করছে। কাটিংয়ের শ্রমিকেরা তাকে বের করার জন্য কাজ বন্ধ রাখছে। অপরদিকে কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আজ মালিক পক্ষের ১১ জন শ্রমিকেরা না এসে বহিরাগত মাস্তান নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘হামলার নেতৃত্ব দেন ম্যানেজমেন্টের মোশারফ (৩০), শাহনাজ আক্তার বেলি (৪০), সাধারণ শ্রমিক আরিফ (৩০) ও মাসুদ (২৯)।’
এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকাল ৯ টার পর থেকে রাজধানীর দক্ষিণ খান কসাই বাড়ি রেল গেট এলাকায় চৈতি গার্মেন্টস শ্রমিকরা পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ।এই সময় রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ,আশপাশ দোকানদার এবং রাস্তার দুই ধারে বসতবাড়িতে আতঙ্ক বিরাজ করে ।
রেল লাইনের পূর্ব দিকে দক্ষিণখান কোসাই বাড়ির মূল সড়কে গার্মেন্টস এর কয়েকশত শ্রমিক জড়ো হয়ে রেল লাইন পার হরে বিমানবন্দরের মূলস ড়কে প্রবেশের চেষ্টা করে ।
এই সময় দক্ষিণ খান থানা ,বিমানবন্দর ও উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ তাদেরকে নিবৃত রাখার চেষ্টা করে । কিন্তু শ্রমিকরা কোনো ভাবেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে চাইছে না ।এই অবস্থায় পুলিশ সম্মলিত ভাবে দক্ষিণ খান এর প্রধান সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গিয়ে কোয়েরাউন্ড গুলি ও কাঁদোনি গ্যাস ছোড়ে । এক পর্যায়ে শ্রমিকরা প্রধান সড়ক ছেড়ে অলিগলি দিয়ে প্রবেশ করে আবারো রেলগেটের কাঁচা কাছি অবস্থান করে।
এই সময় শ্রমিকদের হাতে থাকা ব্যানারটি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে চলে যেতে বলে ।কিন্তু শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান করে স্লোগন দিতে থাকলে পুলিশ তাদেরকে মৃদু লাঠিচার্জ করে কাঁদোনি গ্যাস ছোড়ে । পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে পুলিশের প্রতি । এক পর্যায়ে পুরো এলাকায় আবারো সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং আতঙ্ক বিরাজকরে ।
এদিকে দক্ষিণ খান থানার অফিসার ইনচার্জ মো:জাহাঙ্গীর হোসেন (জাতিসংঘ শান্তি পদক ও আইজি ব্যাচ প্রাপ্ত) তিনি যুগান্তরকে বলেছেন ,সাধারণ মানুষের যান মালের যেন কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন না হয় সেই দিকটি চিন্তা করে আমরা দ্রুত গতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি । শ্রমিকরা কোনো ধরনের যাতে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি ।
ওসি আরো বলেন, ‘শ্রমিকদের ওপর হামলার বিষয়টি শুনেছি। আহত শ্রমিকেরা হাসপাতালে রয়েছে। তাদের খোঁজখবর নিতে পুলিশ গিয়েছে। এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছুই জানতে পারিনি।