জিয়াউল কবির, জেলা প্রতিনিধি, মাগুরাঃ
ঘটনা-১। গত ২ জুন ২০২২ ইং বৃহস্পতিবার সালেহা নামক পঞ্চাশোর্ধ এক গৃহিনী মাগুরা শহরে আক্রান্ত হন ছিনতাইকারী চক্রের দ্বারা। তিঁনি ঐ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রতিদিনের মত নাতনীকে মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌছে দিয়ে পায়ে হেটে আনুমানিক ২ টায় সদর থানার সামনে পর্যন্ত এলে তিনজন ছিনতাইকারী থানার সামনে হতে জামরুলতলা পর্যন্ত পিছু নেয়। প্রথমে বিনয়ের সাথে বলে, আমরা বিপদে পড়েছি। আমাদের কাছে দামী কিছু আছে, অল্প দামে বিক্রি করবো, নিবেন কিনা। তিনি না বলে সামনে পা বাড়ান। ছিনতাইকারীরা ভদ্রমহিলাকে কথা বলার জন্য ঘিরে ধরে। ততক্ষনে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শয়তানের নিশ্বাস নামক চেতনানাশক কেমিকেল স্প্রে করে তার ব্রেইনকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেয় । জামরুলতলা এসে তারা জিজ্ঞেস করে “বাসা কোথায়? বাসায় টাকা আছে কিনা”। তিঁনি নিজের আয়ত্বে ছিলেন না বিধায় বাসার ঠিকানা ও টাকা আছে একথা ওদেরকে সরলভাবে জানিয়ে দেন। তখন ছিনতাইকারীরা বাসা হতে টাকা নিয়ে আসতে বলে ও লুঙ্গি পড়া এক ছিনতাইকারী পিছু আসতে থাকে। তিঁনি বাসায় এসে নির্মানাধীন বাড়ীর কাজের জন্য থাকা এক লক্ষ টাকা নিয়ে জামরুলতলা যান এবং ওদেরকে নিজেই দিয়ে দেন। এসময় হাতে পরা দেড় ভরি ওজনের স্বর্নের বালা ওদের চাওয়ামাত্র দিয়ে দেন।
পরবর্তীতে তাঁর সেন্স ফিরে এলে বিষয়টি সকলকে জানান এবং ঐদিন রাতে মাগুরা সদর থানায় অভিযোগ করেন। তিঁনি লোকগুলোর কথাবার্তা শুনে মাগুরা বা আশেপাশের হতে পারে বলে মনে করেছেন। তিনি ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় উক্ত চক্রের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় জমা দেন।
ঘটনা-২। মাগুরা শুভেচ্ছা স্কুলে পড়ুয়া বাচ্চাকে নিতে আসেন মা। পথিমধ্যে তিনজন ছিনতাইকারী এসে বলে, আমরা খুব বিপদে পড়েছি, একটি প্যাকেট দেখিয়ে বলে-এর মধ্যে দামী কিছু আছে, এটা বিক্রি করে অনেক টাকা পাবেন। এটা নিয়ে আমাদের কিছু টাকা দেন। এসব বলতে বলতে ঐ মহিলার ব্রেইনকে আয়ত্বে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঐ ভদ্রমহিলা নিজের কানের স্বর্নের গহনা, গলার স্বর্নের চেইন ও মোবাইল ফোন নিজে স্বেচ্ছায় দিয়ে দেন। ছিনতাইকারীরা একটি প্যাকেট ঐ ভদ্রমহিলার হাতে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। বাড়ি ফিরে চেতনা ফিরে এলে ঐ ভদ্রমহিলা ঘটনা সকলকে খুলে বলেন। পরিবারের সবাই সারা শহর খুজে ঐ ছিনতাইকারী দলকে পাননি। তখন প্যাকেট খুলে দেখেন তার মধ্যে বিস্কুট আছে। ঐ ভদ্রমহিলার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো মাগুরা জেলা পুলিশ সুপারকে দেখাতে নিয়ে যান।
এ ধরনের ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্র এখন গোটা মাগুরার আনাচে কানাচে বিচরন করছে। এদের বিচরনের পরিধি পাশ্ববর্তী ফরিদপুর, যশোর ও ঝিনাইদহ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া একাধিক টিমও থাকতে পারে। এযাবৎ যতজন ভিকটিম এ ভয়ংকর ছিনতাইকারীদের ভিডিও ফুটেজ পুলিশের নিকট জমা দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন লোক দেখা গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এদের অনান্য টিম হয়ত আগে থেকেই ডাটা কালেক্ট করে যে, কার কাছে টাকা আছে। পরবর্তীতে সম্মুখসারির টিমের নিকট তথ্য পাঠায়। এবার অপারেশনে নামে সম্মুখসারির টিম।
“শয়তানের নিশ্বাস” নামক এক ধরনের চেতনানাশক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করে মানুষকে কিছু সময়ের জন্য নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আক্রান্ত ব্যাক্তি তাই করে যা ওরা বলে।
এ ধরনের ঘটনা ঢাকাসহ সারাদেশে ঘটেছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচার হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে। মাগুরার মোল্লাপাড়া, তাতীপাড়া ও পারনান্দুয়ালীতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মাগুরার উপজেলা শহর মোহাম্মদপুরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সাধারন মানুষ প্রতিকার পাবেন না এমনটি মনে করে অনেকেই আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন না। অনেক সময় থানায় জিডি বা অভিযোগ করা হলেও পর্যাপ্ত তথ্য প্রমান বা আসামী চিহ্নিত না হবার কারনে মামলা হচ্ছে না।অনেকে মাগুরা সদর থানায় ও মাগুরা পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনা জানিয়েছে। এছাড়া র্যাব-৬ ও মাগুরা সিআইডির নিকট তথ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় জমা দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। মাগুরা শহরের বাসিন্দারা হতাশ। প্রতি মুহুর্তে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কোথাও নিরাপত্তা নেই। বাহিরে তো নেই এমনকি ঘরেও নিরাপদ নয় কেউ।মাগুরা শহরের সব সিসি টিভি ফুটেজ চেক করা হলে ছিনতাইকারীদের পুরো চক্রকে সনাক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এই চক্র যদি মাগুরার বাহিরের হয়ে থাকে তাহলে তারা কোন আবাসিক হোটেলে থাকবে অথবা হয়ত এসব ছিনতাইকারীরা মটর সাইকেল বা গাড়ী ব্যবহার করবে। এসব বিষয়ে খোজখবর নিলে হয়ত আসামীদের গ্রেফতার করা যেতে পারে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ।এছাড়া পুলিশের সাইবার টিম সক্রিয় হলে আসামিদের ফুটেজ দেখে পরিচয় সনাক্ত করা যেতে পারে। যেভাবেই হোক এ ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন শহরবাসী।
এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি সংবাদ দিগন্তকে বলেন, এ ধরনের ঘটনার বেশ কয়েকটি তথ্য পেয়েছি, অভিযোগ ও ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। আমরা পুলিশের উদ্যোগেও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সামনে কোরবানীর গরু বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে। ফুটেজে আসামীদের ছবি পাওয়া গেলেও নাম-পরিচয় এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। পরিচয় সনাক্ত হলে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।